ব্রহ্মজ্ঞান ও বিশ্বশান্তি
ব্রহ্মজ্ঞান ও বিশ্বশান্তি : বিশ্বশান্তি কীরূপে আসবে । --------ব্রহ্ম জ্ঞান থেকে ।
ব্রহ্মজ্ঞান কোথায় পাওয়া যাবে ? --------দিব্য জ্যোতি জাগ্রতি সংস্থানে ।
![]() |
ব্রহ্মজ্ঞান ও বিশ্বশান্তি |
ঔঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ তত্সবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি ধিয়ো য়োনঃ প্রচোদয়াত্ ।
(যজু – ৩/৩৫)
ধর্মের সঙ্কেত আমরা যজুর্বেদের একটি মন্ত্রে পাই যাকে আমরা ‘গায়ত্রী মন্ত্র’ বলি । গায়ত্রী অর্থাৎ “গায়াং প্রাণান ত্রায়তে ইতি গায়ত্রী ।” গায়ত্রী হল সেই শক্তি যা আমাদের প্রাণ রক্ষা করে চলেছে এবং সেটা হল সেই মন্ত্র যা অত্যধিক গাওয়া হয়ে থাকে ।
এখানে ঔঁ শব্দটি অ, উ, ম অর্থাৎ অ-কার, উ-কার এবং ম-কার এই তিনটি শব্দের যোগে তৈরি হয়েছে । যাকে ল্যাটিন ভাষায় ওমনিপ্রেসেন্ট, ওমনিপোটেন্ট এবং ওমনিশিএন্ট বলা হয়ে থাকে । এর অর্থ এই, সেই পরমাত্মা সর্বব্যাপী, সর্বশক্তিমান, এবং সর্বান্তর্যামী ।
“সেই সর্বব্যাপী, সর্বশক্তিমান, এবং সর্বান্তর্যামী পরমাত্মা প্রাণের চেয়েও প্রিয়, দুঃখ বিনাশক, সুখ স্বরূপ, প্রেরণা দায়ক, উৎপাদক পরমাত্মা, তাঁর সেই বরণযোগ্য শুদ্ধ তেজ(জ্যোতিকে) আমরা ধারণ করি । ধারণ-কৃত তেজ আমাদের বুদ্ধিকে সদা সন্মার্গের দিকে প্রেরিত করুক”
ভক্তি সুতন্ত্র সকল সুখ খানী । বিনু সৎসঙ্গ ন পাবহিং প্রাণী ।।
পুণ্য পুঞ্জ বিনু মিলহিং ন সন্তা । সতসঙ্গতি সংসৃতি কর অন্তা ।।
(রা. চ. মা. – ৭/৪৫/৩)
গোস্বামী তুলসীদাস বলেছেন ভক্তি হল স্বতন্ত্র । ভক্তি কোনভাবেই কোন কিছুর উপর নির্ভরশীল বা কোনোকিছুর অধীন নয় । ভক্তিই হল সমস্ত সুখের খনি । কিন্তু এই ভক্তির প্রাপ্তি সৎসঙ্গ ছাড়া সম্ভব নয় । অতএব পুণ্যের সঞ্চিত পুঁজি(পুঞ্জ) বিনা অর্থাৎ ভালো কর্ম সংস্কার ছাড়া হতে পারে না । সংস্কারও সেটাই সার্থক যার দ্বারা জীবনে সন্ত মহাপুরুষের দর্শন হয়ে যায় । সেই কর্মই সার্থক যা আমাদের সন্ত মহাপুরুষের চরণে নিয়ে যায়, কারণ সন্তের সঙ্গতি প্রাপ্তি হলে তবেই জন্ম মৃত্যুর বন্ধনের কষ্ট থেকে মুক্তি মিলতে পারে । একমাত্র এর দ্বারাই অনন্ত জনম-মরণরূপী ভবসাগরের বন্ধনের অন্ত হয় । এইজন্যই মহাপুরুষগণ সৎসঙ্গের দিকে সন্তের দর্শনের অত্যধিক মহিমাগান গেয়েছেন –
সঠ সুধরহিং সতসঙ্গতি পাই । পারস পরস কুধাত সুহাই ।।
(রা. চ. মা. – ১/৩/৫)
গোস্বামী তুলসীদাস বলেছেন, যেমন পরশ পাথরের স্পর্শে লোহার মতো কম মূল্যের ধাতুও বহুমূল্য সোনায় পরিণত হয় । এরকমই সৎসঙ্গের প্রভাবে বড় বড় দুষ্ট লোকও শুধরে যায় । এক শেঠের পত্নী ঘরের দায়িত্বভার চাকরানীর উপর ছেড়ে দিয়ে নিয়মিত সৎসঙ্গ শ্রবণ করতে যেতেন । একদিন কিছু চোর তার বাড়ীতে চুরির উদ্দেশ্য নিয়ে পৌঁছায় । চাকরানী চোরদের দেখেই সৎসঙ্গ ভবনের দিকে দৌড় লাগায় । চাকরানীকে দৌড়াতে দেখে চোরেরাও তার পিছনে পিছনে দৌড় লাগায় । সৎসঙ্গ ভবনে পৌঁছে চাকরানী দেখেন শেঠ-নি তখন সৎসঙ্গ শুনতে মত্ত । সে দু-তিনবার আওয়াজ দেয় কিন্তু শেঠ-নি যখন কোন রকম সাড়া দিলেন না তখন সে শেঠনিকে ধরে নাড়িয়ে দেন । তাতে শেঠনির একাগ্রতা ভঙ্গ হয় । তিনি চাকরানীকে ঘাবড়ানো অবস্থায় দেখে প্রশ্ন করেন কী হয়েছে ? চাকরানী বলে “মালকিন অতি শীঘ্র বাড়ী চল, ঘড়ে চোর ঢুকেছে । নাহলে সব চুরি হয়ে যাবে ।” একথা শুনে মালকিন হেঁসে ফেলেন ! বলেন, আসল ধন তো আমার কাছেই আছে । যাকিছু ঘড়ে আছে সেসব তো নকল । নকল ধন নিয়ে গেলেও আমার কোন ক্ষতি হবে না । এসব কথা সেই চোরেরাও শুনে ফেলে এবং তারা ভাবে অবশ্যই আসল ধন, সোনা, চাঁদি, হীরের গয়না তাহলে শেঠনি নিজের কাছেই লুকিয়ে রেখেছেন । অতএব যখন সৎসঙ্গ শেষ হবে এবং শেঠনি বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন তখন রাস্তায় সব ধন ছিনিয়ে নেব । এরকম ভেবে চোরেরাও সৎসঙ্গ শুনতে বসে পড়ে । ওদিকে সন্ত যিনি প্রবচন দিচ্ছিলেন তিনি চোরদের চিনে ফেলেন এবং তাদের উদ্দেশ্য কী তাও বুঝে ফেলেন । অবস্থা বুঝে সন্তও মায়ার বিষয়ে বলা শুরু করেন এবং ধন সম্পত্তির নশ্বরতার বিষয়ে সৎসঙ্গ করতে থাকেন । সেই সন্ত সৎসঙ্গ প্রসঙ্গে বলতে লাগলেন এই ধন সম্পত্তি তো আজ পর্যন্ত কারোর সাথে যায় নি । কিন্তু অসংখ্য ব্যক্তি এই ধন সম্পত্তির কারণেই নিজের জীবন হারিয়ে ফেলেছেন । একবার এক মহাত্মা জঙ্গলের রাস্তায় নগরের দিকে যাচ্ছিলেন । রাস্তায় চার পথিকের সাথে তাঁর দেখা হয় । পথিকগণ মহাত্মাকে দেখে তাঁকে আদর সম্মানের সাথে প্রণাম করে । তখন মহাত্মা সেই চার পথিককে বলেন এই রাস্তায় যেও না কারণ এই রাস্তায় এক ডাইনি বসে রয়েছে । এই বলে মহাত্মা নগরের দিকে চলে যান ।
কিন্তু চারজনই মহাত্মার কথায় কর্ণপাত না করে কথাগুলি হেঁসে উড়িয়ে দিল এবং সেই রাস্তাতেই এগিয়ে চলল । রাস্তায় একটি বৃক্ষের নীচে তারা একটি থলি পড়ে থাকতে দেখে । সেটি খুলে দেখে এবং সবাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল, কারণ থলিটি সোনায় ভরা ছিল । মহাত্মার কথা মনে করে তারা আরো হাসাহাসি শুরু করে এজন্য যে মহাত্মা তো ডাইনি থাকার কথা বলেছিল এখানে তো আমরা ধন-লক্ষ্মী পেয়ে গেলাম । একসাথে বসে বিচার বিমর্ষ শুরু করে, তারা নিজেদের মধ্যে এই সোনাগুলি সমানভাবে ভাগ করে নেবে । একজন বলে ধন প্রাপ্তির খুশিতে সবার আগে আমরা কিছু খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত । তারপর আরামে বসে ভাগাভাগি করে নেওয়া যাবে । সকলেই তার কথায় সম্মতি জানায় । তারপর দুজনে ধন জোগানোর দায়িত্ব নিয়ে বসে পড়ে এবং অপর দুজন কিছু খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করতে নগরের দিকে রওনা দেয় । রাস্তায় দুজনে ভাবে যদি খাবারে বিষ মিশিয়ে দেওয়া হয় তাহলে ধন চারভাগের বদলে দুজনে দুভাগে নেওয়া যাবে । ওদিকে ধনের সুরক্ষার দায়িত্বে যে দুজন ছিল তাদের মনেও ছলনা-কপটতা এসে যায় । তারা ভাবে যারা খাবার আনতে গেছে ওদের দুজনকেই যদি গুলি করে মেরে ফেলি তাহলে এত সোনা দুজনে মিলে ভাগ করে নিতে পারবো । এরকম ভেবে যেই দুজন খাবার নিয়ে সেই বৃক্ষের নিকটে পৌঁছায় ধন রক্ষক দুজনে বন্দুক থেকে গুলি চালিয়ে তাদের হত্যা করে এবং তাদের নিয়ে আসা খাবার খাওয়া শুরু করে । খাবারের মধ্যে বিষ মেশানো থাকার কারণে দুজনেই কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুমুখে পতিত হয় । তখন সেই জায়গাটিতে সোনার থলিটি আগে যেমন ছিল সেরকমই পড়ে রইল তার পাশে পড়ে রইল চারটি মৃতদেহ । বলার তাৎপর্য হল এই ধন হল আসলে দ্বিধা, চিন্তা ও দুঃখের কারণ । এই ধন কার সাথে গিয়েছে ?
এই ভাবে প্রবচন শুনে চোরেদের মন বদলে যায় । তারাও সন্যাসীর চরণে এসে জ্ঞান ভিক্ষা করে ।
অনাহত নাদ, অনহদ ধ্বনি সম্পর্কে শাস্ত্রে বলা হয়েছে,
পহলে-পহলে রিলমিল বাজে পীছে ন্যারী ন্যারী রে ।
ঘণ্টা শঙ্খ বাঁসুরী বীণা তাল মৃদঙ্গ নাগারী রে ।।
এক অন্য স্থানে বলা হয়েছে যে ,
বিনা বাজাএ নিস দিন বাজে ঘণ্টা শঙ্খ নগারী রে ।
বহরা সুন সুন মস্ত হতে হৈ তন কী খবর বিসারী রে ।।
না বাজিয়েও সেই ঘণ্টা, শঙ্খ, নগারী বাজছে যেটা শুনে বহরা ব্যক্তিও আনন্দিত হয়ে ওঠে । এই নাদই ছিল যা দ্বাপর যুগে গোপীগণ শুনতেন । যা শুনে তারা আনন্দিত হয়ে উঠতেন । ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে মেলার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠতেন এবং দৌড়ে চলে যেতেন । কিন্তু সেই বাঁসুরী গোপীরাই কেন শুনতে পেতেন কারণ গোপীরা সেই তত্ত্ব জ্ঞান পেয়েছিলেন । অতএব সেই বাঁসুরী গোপীগণ বাহ্য জগতে নয় বরং অন্তর্জগতে শুনতেন । সেই বাঁসুরী কেবল দ্বাপরেই নয় বরং আজকেও বাজছে । প্রয়োজন হল এমন সতগুরুর যাঁর কৃপার দ্বারা আজও আমরাও সেই বাঁসুরীর ধুন শুনতে পারবো । যা আমাদের অন্তরে নিরন্তর বেজে চলেছে । যিনি আমাদের সেই কীর্তন শুনিয়ে দেবেন তিনিই হলেন পূর্ণ সতগুরূ ।
ঋগ্বেদে এই আওয়াজের সম্বন্ধে বলা হয়েছে,
ঋতস্য শ্লোকো বধিরাততর্দ কর্ণা বুধানঃ শুচমান আয়োঃ ।।
(ঋগ্বেদ – ৪/২৩/৮)
সত্যকে জাগাতে পারে এমন দেদীপ্যমান আওয়াজ বহরা (কানে কালা) ব্যক্তিও শুনতে পারে । আমরা শিবের হাতে ডমরু দেখি, বিষ্ণুর হাতে শঙ্খ দেখি, এবং সরস্বতীর হাতে বীণা রয়েছে । এই সমস্ত কিছু হল অন্তর্জগতেরই বাণীর প্রতীক যাকে অনহদ নাদ বলা হয়, কোথাও আবার অনহদ বাণীর বলা হয়েছে । প্রয়োজন হল কী উপায়ে আমরাও সেই বাণীকে শ্রবণ করে অন্তরনাদ কে জেনে জীবনের সংগীতময় আনন্দে ডুবে পরমানন্দকে জানবো ?
আরো বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
ব্রহ্মজ্ঞান ও বিশ্বশান্তি : বিশ্বশান্তি কীরূপে আসবে । --------ব্রহ্ম জ্ঞান থেকে ।
ব্রহ্মজ্ঞান কোথায় পাওয়া যাবে ? --------দিব্য জ্যোতি জাগ্রতি সংস্থানে ।
ধর্ম পিপাসু প্রতিটি ব্যক্তিকে মুক্ত আহ্বান জানানো যাচ্ছে আসুন আমরাও ঈশ্বর দর্শন করে ধর্মের লাভ উঠাই এবং বিশ্বশান্তির বিরাট মিশনে নিজস্ব যোগদান দিই ।
আরো বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন