তত্ত্বজ্ঞান অর্থ কি? ব্রহ্ম-জ্ঞান কি?
তত্ত্বজ্ঞান, ব্রহ্মজ্ঞান, রাজযোগ কি একই জিনিষ ?
তত্ত্বজ্ঞান অর্থ কি? ব্রহ্ম-জ্ঞান কি?
কেন আমরা মন্দিরে প্রদীপ জ্বালাই
কেন আমরা ঘণ্টা বাজাই ?
আমরা মালা কেন জপ করি ? নাম-স্মরণ(সুমিরন) কি?
শিবলিঙ্গের কথা ভাবুন, মাথায় কেন ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ে?
এই নিবন্ধে আমরা এই সব প্রশ্নের উত্তর দেখতে পাবো। কোনও মনগড়া কথা নয়, আসুন দেখা যাক এই বিষয়ে শাস্ত্রে কি বলে -
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন -
ঈশ্বর সর্বভূতানাং হৃদ্দেশোৰ্জুন তিষ্ঠটি (গীতা ১৮:১৮)
অর্থাৎ হে অর্জুন, পরমেশ্বর ভগবান প্রতিটি জীবের হৃদয়ে(অন্তরে) অবস্থান করেন।
ভগবানের দর্শন পেলেই ভক্ত ও ভগবানের মধ্যে ভক্তির সম্পর্ক স্থাপিত হবে। তাতেই আমাদের লাভ হবে । সেই ভগবানের বা পূর্ণের সঙ্গে যখন আমাদের বা অসম্পূর্ণ এর সম্পর্ক তৈরি হয়, তখন সেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদেরকেও পূর্ণ করে দেন। কিন্তু সেই পরমেশ্বরকে কিভাবে পাওয়া যাবে? এখানে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
ব্রহ্মজ্ঞান কি? তত্ত্বজ্ঞান, ব্রহ্মজ্ঞান, রাজযোগ, ব্রহ্মবিদ্যা, পরাবিদ্যা, রাজবিদ্যা কি? এগুলো কি একই জিনিষ?
ব্রহ্মজ্ঞানের অর্থ : ব্রহ্ম শব্দটি 'বৃহ' মূল ধাতু থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ - বৃহৎ বা সর্বব্যাপ্ত ঈশ্বরকে অর্থাৎ ভগবানকে, যার বিস্তার সর্বব্যাপী। জ্ঞান শব্দটি 'জ্ঞা' মূল ধাতু থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ হল জানা। অতএব, সেই সর্বব্যাপী শক্তিকে(ব্রহ্মকে) নিজের মধ্যেই জানা, তার সাথে সরাসরি সাক্ষাৎকার করার বিদ্যাই হল - ব্রহ্মজ্ঞান।
'ব্রহ্ম জ্ঞান' (ঐশ্বরিক জ্ঞান) একটি চিরন্তন কৌশল যার মাধ্যমে আমরা কার্যত ঈশ্বরকে অনুভব এবং উপলব্ধি করতে পারি।
'ব্রহ্মবিদ্যা' বা 'ব্রহ্মজ্ঞান' বা ‘তত্ত্বজ্ঞান’ হলো অন্তর্জগতের সর্বোচ্চ বিজ্ঞান। আর্য - গ্রন্থে একে পরা বিদ্যা' বলে সম্বোধন করা হয়েছে। গীতায় একেই 'রাজ যোগ' বলে। কোথাও এই ব্রহ্মজ্ঞানকে তত্ত্বজ্ঞান, কোথাও বা রাজযোগ, ব্রহ্মবিদ্যা, পরাবিদ্যা, রাজবিদ্যা ইত্যাদি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে ।
যোগীরাজ শ্রী কৃষ্ণ স্বয়ং এর প্রশংসায় বলেছেন- 'এটা হল রাজবিদ্যা' যার অর্থ হল এটি সমস্ত বিদ্যার রাজা । পাতঞ্জল দর্শনে সর্ব- বিষয়ক, সর্বব্যাপী, তারক জ্ঞান বলা হয়েছে ।
বেদেও একই কথা বলে - ব্রহ্মবিদ্যাম সর্ববিদ্যাপ্রতিষ্ঠাম'
অর্থাৎ ব্রহ্মবিদ্যা হল সমস্ত বিদ্যার বা শিক্ষার ভিত্তিপ্রস্তর। ব্রহ্মজ্ঞানই সমস্ত জ্ঞানের ধারার উত্স এবং লালনপালনকারী। এর মধ্যেই সমস্ত বিদ্যা প্রতিষ্ঠিত।
আরও সহজ ভাষায় বলা যায় দিব্য দৃষ্টির দ্বারা নিজের অন্তরেই ভগবানকে দেখার বিদ্যাই হল ব্রহ্মজ্ঞান।
এই জ্ঞান সবসময় একটি অসাধারণ বিষয় হিসাবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। নিঃসন্দেহে ব্রহ্মজ্ঞান বা ঈশ্বর-দৃষ্টি অসাধারণ বিষয় ।
ঈশ্বরকে দেখা কঠিন নয়; কঠিন বা দুষ্কর জিনিষ হল এমন একজন সত্যিকারের ব্রাহ্মণিষ্ঠ সদগুরুকে খুঁজে পাওয়া, যিনি নিজেও ভগবান লাভ করেছেন এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকৃত ভক্তকে ভগবানের দর্শন করিয়ে দেওয়ানোর ক্ষমতাও রাখেন। (গীতা 4:34)
দীক্ষা নেওয়ার সময়, গুরু শিষ্যের দেহের মধ্যে সূক্ষ্ম দেহে শিবত্বের সমাবেশ ঘটান -
“শিবশক্তিকারেবেশাদ গুরু: শিষ্যপ্রবোধক”
অর্থাৎ শিষ্যকে তার ঐশ্বরিক চৈতন্যের স্পর্শের মাধ্যমে জাগ্রত করেন। এর মূল জড় কেন্দ্রগুলিতে নতুন চেতনার সঞ্চার করেন।
এর মাধ্যমেই তার মধ্যে ব্রহ্মজ্ঞানের প্রক্রিয়া শুরু হয়। উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভক্ত যখন একজন নিখুঁত পূর্ণ গুরুর দ্বারা দীক্ষিত হয়, তখন তার অন্তর্জগতে অতীন্দ্রিয় (ইন্দ্রিয়ের বাইরে), দিব্য ও অলৌকিক ঐশ্বরিক এবং অতিপ্রাকৃত ঘটনার দৃশ্যের অভিজ্ঞতা হয় । সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ব্রহ্মজ্ঞান-দীক্ষার পদ্ধতি এবং এর মাধ্যমে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতাগুলি শাস্ত্র অনুসারে হওয়া উচিত। এই অভিজ্ঞতার বিবরণ চারটি পদার্থে বিভক্ত। রামচরিত মানস অযোধ্যাকাণ্ডে বলা হয়েছে -
“শ্রী গুরু চরণ সরোজ রাজ নিজ মন মুকুর সুধারী৷
বরনুন রঘুবর বিমল জাসু জো দায়ক ফল চারি।।”
অর্থাৎ আমি সেই গুরুর চরণ রজ ধারণ করি, যিনি আমার মনের আয়না পরিষ্কার করে দেবেন। তখন আমি প্রভুর শুদ্ধ মহিমা গাইব, যেটা আমাকে চারটি ফল প্রদান করবে।
গুরুবানীতেও একই কথা বলা হয়েছে,
“চারি পদরথ লে জাগি জনমিয়া শিব শক্তি ঘরি বাসু ধরে।” – (গুরুবাণী 1014)
অর্থাৎ মাতৃগর্ভে যখন সন্তান আসে তখন তার চারটি বিষয়ে জ্ঞান থাকে, কিন্তু জন্মের পর সে সেই জ্ঞান ভুলে যায়। বড়ো হয়ে সে পূর্ণ সদগুরুর কৃপায় পুনরায় সেই জ্ঞান লাভ করে।
আসুন, এখন তাহলে দেখা যাক এই চারটি পদার্থ কি কি, সেই নিয়ে আলোচনা করি -
১) তত্ত্বজ্ঞান বা ব্রহ্মজ্ঞানের প্রথম পর্যায় - 'প্রকাশ' বা আলো বা জ্যোতি :-
কেন আমরা মন্দিরে প্রদীপ জ্বালাই?
আমরা মন্দিরে যে প্রদীপ জ্বালাই তা এই অন্তর জগতের আলোর বা প্রকাশেরই বাহ্যিক অভিব্যক্তি ।
যা দৃষ্টিহীন একজন অন্ধ মানুষও দেখতে পারে । যে দিব্য নেত্র(ত্রিনেত্র, ত্রিনয়ন) আমরা শিব মূর্তিতে দেখে থাকি বা ঐশ্বরিক চক্ষু রূপে যে দিব্য চক্ষু দেখি তা হল এই তৃতীয় দিব্য নেত্রর রূপ, যা প্রতিটি মানুষের মধ্যে বিদ্যমান।
ধারাপাতেও আমাদের পড়ানো হয় তিনে নেত্র অর্থাৎ তিনটি চোখ । দুটি চোখ যেটা বাইরের সমস্ত ভৌতিক বস্তু সমূহকে দেখার জন্য ব্যাবহার হয়। কিন্তু তৃতীয় নেত্র সম্পর্কে অনেকেরই অজানা রয়ে গেছে। কারন তাদের জীবনে পূর্ণগুরু আসেন নি ।
ব্রহ্মজ্ঞানে দীক্ষা নেওয়ার প্রক্রিয়ায়, সদগুরু একজন শিষ্যের ঐশ্বরিক দৃষ্টি বা তৃতীয় দিব্য নেত্র খোলেন এবং তাকে অন্তর্মুখী করে তোলেন । এই অভ্যন্তরীণ আলো প্রকাশিত হওয়ার ঘটনা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এগুলি সাক্ষত পরব্রহ্মের নানারকম দৃশ্য । কেবল আলোই নয়, পুরো মহাবিশ্বের রঙিন দৃশ্যগুলি, আশ্চর্যজনক রঙের সাথে, ভক্তের অভ্যন্তরীণ চেতনা পৃষ্ঠে জ্বলজ্বল করে ভেঁসে ওঠে । এই বিষয়ে কবির দাস জি বলেছেন -
“উলট সমানা আপ মে প্রকটি জ্যোতি অনন্ত।
স্বামী সেবক এক সঙ্গ, খেলৈ সদা বসন্ত। ”
ঋতুরাজ বসন্ত হাসে অন্তরের জগতে। মনোরম দৃশ্যগুলো উল্লাসে রঙ ছড়ায়। এমন বসন্তে প্রভু ও ভক্ত একসঙ্গে কাঁপিয়ে উৎসব উদযাপন করে। আত্মা এবং পরমাত্মা একে অপরের মধ্যে বিলীন হওয়ার আনন্দ উপভোগ করে।
গুরু বাণীতেও একই কথা বলা হয়েছে-
“কাসট মাহি জিউ হ্যায় বৈসন্তরু মাথি সঞ্জমি কড়ি কঢিজই।
রাম নামু হ্যায় জোতি সবাই ততু গুরমতি কাঢি লাইজৈ ৷” -(গুরবানী-১/১৩২৩)
আগুন যেমন কাঠের মধ্যে লুকিয়ে থাকে, যা একটি বিশেষ কৌশলের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। একইভাবে সকল জীবের মধ্যে প্রভুর নামের জ্যোতি রয়েছে। গুরুর কাছে সেই কৌশল জানা দরকার, যার দ্বারা আমরা ঐশ্বরিক দিব্য আলো দেখতে পারি।
মন্দির, গুরুদ্বওয়ারা, গীর্জা ইত্যাদি বিশ্বের অনেক জায়গায় আজ কেন প্রদীপ জ্বালানো হয়?
পুরোহিত মন্দিরে আরতি করেন। যখন ভগবান শ্রীরাম বা শ্রীকৃষ্ণ কিংবা দেবীমাকে আরতি দেওয়া হয়, তখন থালায় একটি প্রদীপের আলো রাখা হয় । বাড়িতেও আমরা ঈশ্বরের মূর্তির সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রণাম করি। দুই চোখ বন্ধ করে প্রণাম করি। প্রণাম করার সময় চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়া এটাও মানুষের জন্য সংকেত যে আমরা যে মূর্তির সামনে প্রণাম করছি তার আসল রূপটি আসলে একটি আলো যা এই দুটি বাহ্যিক চোখ দ্বারা দেখা যায় না।
মহালয়ার মন্ত্রও একই কথা বলছে,
ইয়া দেবী সর্ব ভুতেষু জ্যোতিরূপেন সংস্থিতা ।
নমস্ত্যাস্যিয়াই নমস্ত্যাস্যিয়াই নমঃ নমাহাঃ ।। – মহালয়া মন্ত্র
যার অর্থ হল নিম্নরুপ -
‘ইয়া’ অর্থাৎ এই, ‘দেবী’ অর্থাৎ এখানে ঈশ্বরকে বলা হয়েছে, ‘সর্ব’ অর্থাৎ সমস্ত, ‘ভুতেষু, অর্থাৎ ভুতে বা বস্তুতে, ‘জ্যোতিরুপেন’ অর্থাৎ জ্যোতিরূপে, প্রকাশরূপে বা আলোর রূপে, ‘সংস্থিতা’ অর্থাৎ অবস্থিত বা বিরাজমান । নমস্ত্যাস্যিয়াই নমস্ত্যাস্যিয়াই নমঃ নমাহাঃ অর্থাৎ সেই ঈশ্বরকে আমি বারবার নমস্কার করি ।
আমরা মহালয়ার মন্ত্রে উচ্চারন শুনছি, এই ঈশ্বর সমস্ত বস্তুতে জ্যোতিরূপে সর্বত্র বিরাজমান । আমরা সেই ঈশ্বরের জ্যোতিরূপকে নমস্কার করছি । কিন্তু কজন এর অর্থ বুঝতে পেরেছি ?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন -
“জ্যোতিষামপি তজ্যোতিস্মতস: পরমুচ্যতে।
জ্ঞানং জ্ঞেয়ং জ্ঞানগম্যং হৃদি সর্বস্য বিষ্ঠিতম্।”
অর্থাৎ, পরমাত্মা, যিনি জ্যোতির ও পরম জ্যোতি, তিনি অন্ধকারের ঊর্ধ্বে। তিনি শুধুমাত্র ঐশ্বরিক জ্ঞান বা তত্ত্বজ্ঞান এর দ্বারাই জানার যোগ্য। সেই পরমাত্মা তত্ত্বজ্ঞান দ্বারাই প্রাপ্ত হয় এবং তিনি সকলের হৃদয়ে অবস্থিত। যে ঈশ্বর সকলের হৃদয়ে মিশে আছেন।
তাই আমাদেরও এমন একজন পূর্ণ সৎগুরু (সত্যগুরু) দরকার যিনি সেই অলৌকিক ঐশ্বরিক জ্ঞান বা তত্ত্বজ্ঞান দিয়ে আমাদের অন্তরের অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করতে পারবেন এবং আমাদের হৃদয়ে সেই পরম আলোকের প্রকাশে প্রকাশিত করতে পারবেন।
২) তত্ত্বজ্ঞান বা ব্রহ্মজ্ঞানের দ্বিতীয় পর্যায় - 'অনহদ নাদ' বা ‘অনহদ ধ্বনি’ বা “অনাহত নাদ”। মন্দিরে কেন আমরা ঘণ্টা বাজাই ?
আমরা মন্দিরে যে ঘণ্টা বাজাই তা এই চিরন্তন ধ্বনির বহিঃ প্রকাশ। আদিনাম যখন সুষুম্নায় প্রবেশ করে এবং উপরের দিকে উঠে যায়, এই প্রক্রিয়ায় অনহদ নাদ প্রকট হয়। যা একজন বধির ব্যক্তিও শুনতে পায়। দীক্ষার আগে সাধক কখনো এই শব্দ শুনতে বা গ্রহণ করতে পারে না।
এই ধ্বনিটি আসলে সূক্ষ্ম দিব্যকোটির শব্দ তরঙ্গ বা কম্পন । এক বিশেষ ধরনের শব্দ-শক্তি। এই নাদটি আবির্ভূত হওয়ার সাথে সাথে শিষ্যের অন্তর্জগতে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, রাগ এবং রাগিনীগুলি প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।
“বাজত আনহদ বাঁশুরি.... রাগ ছত্তিশো হোই রহে, গর্জত গগন গম্ভীর ।”
- মেঘের গর্জন! নুপুর এবং ঘন্টার মত রুনুঝুনু ! সমুদ্রের গর্জন! মৃদং, ঢোলের মহানাদ! বাঁশির সুমধুর সুর! বীণার ঝংকার ! সুষুম্না নাড়ীতে নাম তরঙ্গ প্রবেশ করলেই এই শব্দগুলি শোনা যায়। শুদ্ধ ভাবের সাথে ক্রমাগত অনুশীলন করে সে আগুনের দ্বারা প্রেরিত শব্দ শুনতে পায়। এটি কান ছাড়াই শোনা যায়। কারণ এটি বাহ্যিক নয়, এটি অভ্যন্তরীণ পারলৌকিক শব্দ। ব্রহ্মজ্ঞানের এই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমেই মহাজাগতিক ব্রহ্মনাদের অভিজ্ঞতা বা শোনা যেতে পারে।
সঙ্গীতের পদ্ধতি যাই হোক না কেন, তবে আনন্দ আসে কেবল সঙ্গীতেই। কিন্তু পৃথিবীর যে কোনো পদ্ধতিতে সঙ্গীত শোনার একটা সীমা আছে। কোথাও না কোথাও গিয়ে সেই সঙ্গীত শেষ হয়।
বলা হয় সঙ্গীত দুই প্রকার। একটিকে বলা হয় 'আহত' নাদ এবং অপরটিকে 'অনাহত নাদ'। আহত নাদ যা আমাদের করতাল বা ঘা ইত্যাদি ঘর্ষণের দ্বারা উৎপন্ন হয় । যা আমরা ঘণ্টা, শঙ্খ, ঢোল, মৃদঙ্গ, বাঁশি ইত্যাদির মাধ্যমে প্রকাশ করি।
কিন্তু এমন একটি সঙ্গীতও আছে যাকে বলা হয় অনাহত নাদ। যেটাকে বাজানো হয় না, সেই নাদ আপনা-আপনিই বাজতে থাকে। কিন্তু সেই সঙ্গীতের প্রাপ্তি গুরুর মাধ্যমেই সম্ভব। তার জন্য গুরু বাণীতে বলা হয়েছে-
“নির্ভউ কৈ ঘড়ি বজাবহী তুর । অনহদ বজাহী সদা ভরপুর।” - (গুরুবাণী - 971)
সেই প্রভুর ঘরে অর্থাৎ এই মানবদেহেই সেই সঙ্গীত বাজছে যা অনন্ত। যার কোন সীমা নেই, সেই অনহদ ধ্বনি ।
ঋগ্বেদেও এই ধ্বনি সম্পর্কে বলা হয়েছে -
“ঋতস্য শ্লোকো বধিরাততর্দ কর্ণ বুধান: শুচমান আয়ো:” - (ঋকবেদ - ৪/২৩/৮)
সত্যকে জাগ্রত করে এমন উজ্জ্বল আওয়াজ একজন বধির মানুষও শুনতে পায়।
আমরা দেখি শিবের হাতে ডমরু, বিষ্ণুর হাতে শঙ্খ এবং সরস্বতীর হাতে বীণা। এই সমস্তই অন্তর্জগতের ধ্বনির প্রতীক, যাকে বলা হয় 'অনহদ নাদ' বা ‘অনহদ ধ্বনি’ যাকে অনহদ বাণীও বলা হয় । প্রয়োজন হলো সেই ধ্বনির খোঁজ করা, কীভাবে সেই বাণী শুনে এবং তার ভিতরের ধ্বনি জেনে জীবনের সঙ্গীতময় আনন্দে ডুবে পরমানন্দকে জানা সম্ভব তার জন্য প্রচেষ্টা করা ।
৩) তত্ত্বজ্ঞান বা ব্রহ্মজ্ঞানের তৃতীয় পর্যায় - 'আদিনাম', “শ্বাশত নাম", “চিরন্তন নাম” বা “সনাতন নাম” । আমরা মালা কেন জপ করি ? নাম-স্মরণ(সুমিরন) কি?
শাস্ত্রে বলা হয়েছে - শিশু যখন মাতৃগর্ভে থাকে, তখন সে ভগবানের নাম জপ করে। তাই বিবেচনার বিষয় হলো গর্ভে থাকা শিশুটি কোন ভাষা শিখেছে ! জপেরমালা ভেতরে পৌছাবেই বা কি করে! আর যদি শুধু বাহ্যিক জপমালা জপ করাকেই যদি ভগবানের নাম জপ ধরা হয়, তবে যার হাত নেই সেই বা কীভাবে তা জপ করবে?
আমাদের মধ্যে তিনটি প্রধান নাড়ি রয়েছে - ইড়া, পিঙ্গলা এবং সুষুম্না। সুষুম্না সবচেয়ে মহিমান্বিত এবং শিরোভাগে অবস্থিত ব্রহ্মরান্ধ্র (মাথার সর্বোচ্চ অংশ) থেকে মেরুদণ্ডের সবচেয়ে নীচে সূক্ষ্ম প্রান্ত পর্যন্ত যায়।
দীক্ষার প্রক্রিয়ায়, সদগুরু এই সুষুপ্ত নাড়ির আধ্যাত্মিক অভ্যন্তরীণ পথ খুলে দেন এবং পুনরুজ্জীবিত করেন। এই ক্রমানুসারে, জাগ্রত সুষুম্নায় শক্তি প্রবেশ করে। ঋষিরা একে 'আদিনাম' বা 'বাক' নামে অভিহিত করেছেন। গুরু সাহেবানরা একে 'শব্দ' বা 'নাম' বলেছেন, তারপর সুফি ফকিররা একে 'কলমে ইলাহী' বলেছেন। বাইবেল একে দিয়েছে 'শব্দ বা word' এর সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তারপর ইউনানী গ্রীক দার্শনিকরা 'লোগাস' নাম অভিহিত করেছেন। একে হিব্রুতে 'মৈমরা', অরিমিনিতে 'এমর', চীনা ভাষায় 'তাও' বলা হয়।
এই নামটি অব্যক্ত। মুখে বলা যায় না বলে অজপা নামও বলা হয়ে থাকে। আধ্যাত্মিক জগতের সাথে সম্পর্কিত বেশিরভাগ লোকই একটি বিশেষ মন্ত্র বা ভগবানের কোনো গুণের নামকে 'অনন্ত নাম' বলে মনে করেন।
কিন্তু লিখিত ও জীবন্ত ধর্মগ্রন্থ (সাধু ও সদগুরু) অনুসারে ভগবানের আসল নাম শব্দের উপরে। ঈশ্বরের চিরন্তন নাম পৃথিবীর কোনো বর্ণমালায় উচ্চারিত হতে পারে না। এটা একটা আদি কম্পন বা তরঙ্গ ! এটি একটি অবিনশ্বর স্পন্দন, যা আমাদের প্রাণে সূক্ষ্মভাবে সমাহিত রয়েছে। বেদ একে 'প্রানস্য প্রাণ' বলেছে সমস্ত প্রাণের প্রাণ (জীবন) বলা হয়েছে । ভাগবান শিবের হাতে যে মালা দেখা যায় তা আসলে এই আদিনাম সুমিরনের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
এই বিষয়ে সাধক চরণদাস জি বলেছেন -
“ঘট মে উচ্চ ধ্যান শব্দের সোহং সোহং মালা।”
অর্থাৎ সেই অব্যক্ত বা অপ্রকাশিত নাম বা শব্দটি অন্তর্ভূক্ত রয়েছে শ্বাসের মালায়।
যেটা না তো আমরা জপ করি, আর না আমাদের জিহ্বা দিয়ে উচ্চারণ করি, বরং তবে এটি একটি এমন মন্ত্র যা শ্বাসের উপর নিঃশ্বাসের সাথে চলমান একটি শক্তি মন্ত্র, এটিই হল অজপা, এটিই সেই নাম। মহাপুরুষদের কথা যখন আমরা বুঝতে পারি না, তখন তারা বলতে বাধ্য হন; কবিরদাস জী কেও বাধ্য হয়ে বলতে হয়েছে, তিনি বলেছেন -
“মালা তো কর মেঁ ফির জিভ ফির মুখ মাহিঁ।
মনুবা তো চহুঁদিসি ফিরৈ ইয়ে তো সুমিরণ নাহীঁ।”
মানুষ হাতে মালা নিয়ে জপ করার সময় তার জিহ্বা দিয়ে ভগবানের নাম নেয়, কিন্তু তার মন চারদিকে ঘুরে বেড়ায়। আমরা গলায় মালা পড়েছিলাম মনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, কিন্তু সেই মনটা তবুও তো সর্বত্র ছুটে পালিয়ে বেড়ায় । তাহলে তার নিয়ন্ত্রণ কোথায়? সেই মন বশে এলো কোথায় ? এটা নাম স্মরণ বা সুমিরন হলো না। এটি সেই নাম নয়। তাহলে প্রশ্ন ওঠে আসল নাম-স্মরণ বা সুমিরন তাহলে কি, যার দ্বারা মন নিয়ন্ত্রণে আসে ? এই বিষয়ে সাধুদের বাণী হল-
“সুমিরন সূরত লাগাই কৈ, মুখতে কছু ন বোল।
বাহার কে পট বন্দ কর, ভিতর কে পট খোল।”
সুমিরন উপর উপর মুখে রাখছেন কেন, মুখে কিছু বলা যাবে না। বাইরের দরজাগুলো বন্ধ করে, অন্তর্জগতের দ্বার খুলে দিন। অর্থাৎ এটি মনে রাখা উচিত বাইরের পর্দা বন্ধ করা উচিত ।
কবির দাস জি বলেছেন-
“সদগুরু এইসা কীজিয়ে পড়ে নিশানে চোট।
সুমিরন এইসা কীজিয়ে জিভ হিলে ন হোঠ।”
সতগুরু এমন করুন, যাতে লক্ষ্যে বা নিশানায় আঘাত লাগে । ঈশ্বরের নাম স্মরণ (সুমিরন) এমন ভাবে করুন যেন জিভ না নড়ে, আর না নড়বে ঠোঁট ।
শুধু সুমিরন সেটাই করা উচিৎ যার জন্য না জিভ কিংবা ঠোঁট নড়াতে হয়। ভাবুন একজন বিকলাঙ্গ যার জিহ্বা নেই সে কীভাবে জিভ নাড়াবে ?
নাম জপের মহিমার কথা বলতে গিয়ে গোস্বামী তুলসীদাস জি বলেছেন-
“চহুঁ জুগ তীনি কাল তিহুঁ লোকা।
ভএ নাম জপি জীব বিসোকা।” (রাম চরিত মানস ১/২৭/১)
চার যুগে, তিনকালে এবং তিনলোকে(ত্রি-লোকে বা ত্রি-জগতে) কেবলমাত্র নাম জপের দ্বারাই জীব দুঃখমুক্ত হয়।
যখন জীবনে একজন পূর্ণ সতগুরুকে পাওয়া যায়, তখন তিনি সেই অব্যক্ত বা অক্ষরটি প্রকাশিত করেন যা আগের থেকেই মানুষের হৃদয়ে সমাহিত রয়েছে । যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা প্রতিটি কণায় রমণ করে এমন সেই আদিনামকে না জানতে পারি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন, ভগবানকে পাওয়া আমাদের পক্ষে অসম্ভব। এই সূক্ষ্ম ক্রিয়াটিও কেবল গুরুর কৃপাতেই প্রকাশ পায়। তাই আমাদের এমন একজন গুরু দরকার যিনি আমাদের সেই শাশ্বত চিরন্তন নামটি স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন।
৪) তত্ত্বজ্ঞান বা ব্রহ্মজ্ঞানের চতুর্থ পর্যায়- 'অমৃত' । শিবলিঙ্গের কথা ভাবুন, মাথায় কেন ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ে?
সকল শাস্ত্রেই অমৃতের কথা আলোচনা করা হয়েছে। আমরা যখন কোনও মন্দিরে বা ধর্মীয় স্থানে যাই সেখানে আমরা অমৃতের আলোচনা শুনতে পাই, কিন্তু কীভাবে আমরা সেই অমৃত পেতে পারি সেটা বিবেচনা করার বিষয়। আজ বিশ্বে নানাভাবে অমৃত খাওয়ানো হচ্ছে। পুরোহিত মহাশয়, পণ্ডিতজী মন্দিরে চরণামৃত দেন। গুরুদ্বায়ারা গুলোতে অমৃত দেওয়া হয়। কিন্তু যে অমৃত আমাদের জিহ্বায় স্পর্শ করার সাথে সাথে তা অপবিত্র হয়ে যায়, সেই অমৃত আমাদের মনকে কিভাবে পবিত্র ও শুদ্ধ করবে?
প্রকৃতপক্ষে, অমৃত পূর্ব থেকেই প্রতিটি জীবের হৃদয়ে সমাহিত হয়ে রয়েছে। শিবলিঙ্গের উপরে একটি কলসী থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল অবিরাম ঝরে পড়ে । এর গভীর আধ্যাত্মিক অর্থ রয়েছে। আমাদের সূক্ষ্ম জগতে মাথার উপরের অংশে একটি স্থান রয়েছে, যাকে বলা হয় সহস্রার চক্র, ব্রহ্মরন্ধ্র বা সহস্ত্রদল কমল। বিভিন্ন গ্রন্থে এটির জন্য বিভিন্ন উপমা ব্যবহার করা হয়েছে। কোথাও একে অমৃতের কূপ, উলটো পদ্ম, উল্টো ঘড়াও বলা হয়েছে। যেখান থেকে ফোঁটা ফোঁটা অমৃত ঝরে।
কবীরদাস জী বলেন -
“গগন মণ্ডল অমৃত কা কুয়া তঁহা ব্রহ্মা কা বাসা।
সগুড়া হোবে ভর ভর পীবে নিগুড়া মরত প্যাসা।”
আকাশ মন্ডলে একটি উল্টো কুয়ো আছে, যেখানে সেই পরমাত্মা স্বয়ং নিবাস করেন। গুরু যিনি ধারণ করেছেন তিনি (সগুড়া) মন ভরে পান করেন আর যিনি গুরু ধারণ করেন নি অর্থাৎ নিগুড়া পিপাসায় মরে।
এখন আমরা আকাশে কূয়া খুঁজতে শুরু করলে সারাজীবনেও কূপ খুঁজে পাব না, কারণ এখানে পার্থিব কুয়োর কথা বলাই হয়নি, বরং সেই 'কূপের' কথা বলা হয়েছে যা দেহের ভিতরেই রয়েছে। কেবলমাত্র যারা গুরুর কাছ থেকে ব্রহ্মজ্ঞানের কৌশল পেয়ে যান, তারাই জানেন কীভাবে আমরা এই দেহের মধ্যেই সেই অমৃত পেতে পারি। কবিরজী শুধু যে অমৃতের কূপ আছে তা বলেননি, তিনি সেইসাথে এটাও বলেছেন সেখানে ব্রহ্মার বাসস্থান আছে, তার মানে সেখানে ভগবানের দর্শন পাবেন।
এটিকেই উপনিষদে আরো স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে -
“অব্জপত্রমধ: পুষ্পমূর্ধনালমধোমুখম।”
অর্থাৎ উপরিভাগে কাঁটা যুক্ত একটি পদ্মফুল নিচের দিকে মুখ করে ব্রহ্ম-রন্ধ্রে অবস্থিত।
সাধু দরিয়া এই বিষয়ে বাকপটু সরস ভঙ্গিমায় গেয়েছিলেন -
'বুঁদ অখণ্ডা সো ব্রহ্মাণ্ডা'
অর্থাৎ আমাদের মাথার ভেতরে ব্যাপ্ত অভ্যন্তরীণ আকাশ, অন্তর্গগন বা ব্রহ্মাণ্ড থেকে নিরন্তর, অবিরামভাবে, অবারিত আকারে অমৃতের ফোঁটা ঝড়ে পড়ছে ।
কিন্তু এই অমৃতের উপলব্ধি বা অনুভূতি করা যায় কেবলমাত্র ব্রহ্মজ্ঞানের দীক্ষা ও তার সাধনা অনুশীলনের মাধ্যমে। অমৃতের এই রসময় পানীয় বহু জন্মের, জন্ম জন্মান্তরের আত্মার তৃষ্ণা মেটায়।
আমরা অনেক জায়গায় চারটি পদার্থের বর্ণনা পাই, কিন্তু সেই চারটি পদার্থ কী তা আমরা জানি না। চারটি পদার্থ সম্পর্কে গুরুবাণীতে বলা হয়েছে -
“চারি পদরথ লে জগি জনমিয়া শিব শক্তি ঘরি বাসু ধরে।” (গুরুবাণী-১/১০১৩)
আমরা যখন পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছিলাম, চারটি জিনিস সাথে নিয়ে এসেছিলাম। এখানে ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ এগুলোর কথা বলা হয় নি। ভাবতে হবে আমরা কি ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ সাথে নিয়ে এসেছিলাম ? আর যদি আমরা ধর্ম, অর্থ, কাম বা মোক্ষকে চারটি জিনিস মনে করি, তাহলে এর অর্থ হল ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষ আমাদের সাথেই এসেছে। সাথেই যখন নিয়ে এসেছি তাহলে কেন আবার তাদের প্রাপ্তি করার জন্য বলা হয় ? তাহলে আমাদের সঠিক ভাবে বুঝতে হবে যে কোন চারটি পদার্থ নিয়ে আমরা পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছি?
গুরুবানীতে অন্য জায়গায় বলা হয়েছে যে -
“সতীগুরু কয় বসি চারি পদার্থ। তিনি সমায়ে এক কৃতার্থ।” (গুরুবাণী-১/১৩৪৫)
অর্থাৎ চারটি জিনিসই সতগুরুর বশে বা নিয়ন্ত্রণে। আমরা যদি চারটি জিনিস আমাদের সাথে নিয়ে এসেছি তবে সেগুলি সতগুরুর কাছে কেন, সেটা কেমন করে হয় ? আমাদের সেটাই জানতে হবে যে সেই চারটি পদার্থ বাস্তবে কোন-কোনটি ?
এই বিষয়ে সম্পর্কে মীরাবাই ভজন গেয়ে বলেছেন-
“গলি তো চারো বন্ধ হুই, ম্যাঁয় হরি সে মিলু ক্যাইসে।”
অর্থাৎ চারিদিকের সকল রাস্তাগুলো সবই বন্ধ, হরি বা প্রভুর সঙ্গে দেখা পাবো কী করে?
প্রকৃতপক্ষে, এগুলিই “অভিব্যক্তিকরানি যোগে” এটাই পূর্ণ যোগের (ব্রহ্মজ্ঞানের) সূচক ও লক্ষণ ।
শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে ভগবান আবির্ভূত হন এবং ব্রহ্মাজিকে 'চতুষ্পদী ভাগবত' জ্ঞান প্রদান করেন।
বৌদ্ধধর্মে মহাত্মা গৌতম বুদ্ধ বলেছেন 'চারটি আর্য্য সত্য' এবং মহাবীর বলেছেন 'চার ঘাট' । তাহলে এই চারটি উপলব্ধি করার মত জিনিস আসলে কী কী যা সাধক, মহাপুরুষ, ঋষি, গুরু, অবতাররা তাদের বাণীতে সর্বদা আলোচনা করেছেন। এগুলো জানতে হবে এবং এই চারটি জিনিস বুঝতে হলে সতগুরুর স্মরণে যেতে হবে। সকল ধর্মগ্রন্থেও চারটি পদার্থের মহিমা গায়। ভক্তরা এই চারটি জিনিস কেবলমাত্র সদগুরুর কৃপায় পেতে পারে যা আমাদের মোক্ষ দেয়। তাই আমাদের এমন একজন তত্ত্বদর্শী সতগুরু দরকার যিনি আমাদের তত্ত্বজ্ঞান বা ব্রহ্মজ্ঞান প্রদান করে আমাদের সেই চারটি পদার্থের বোধ করিয়ে দিতে পারবেন।
তত্ত্বজ্ঞান/ব্রহ্মজ্ঞান পেতে আগ্রহী হলে Click here to visit Brahm Gyan Meditation
[বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ পুরো নিবন্ধটির বিষয়বস্তু সম্পূর্ণটাই সংগৃহীত এবং বাংলাভাষী মানুষের বোধগম্যের জন্য বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে মাত্র। অনুবাদে কোনোরকম ভুল ত্রুটি থাকলে মার্জনা করবেন। অনুবাদ কর্তা লেখাটির বিন্দুমাত্র শ্রেয় দাবী করে না। যাঁর অসীম কৃপায় বাংলায় অনুবাদ সম্ভব হলো সম্পূর্ণ শ্রেয় পাবার একমাত্র অধিকারী হলেন বর্তমান সময়ের একমাত্র পূর্ণযোগী সর্বশ্রী আশুতোষ জী মহারাজ। পুরো নিবন্ধটি পড়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ ।]
Read More
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন