রবিবার, ৫ মে, ২০২৪

মুক্ত আহ্বান || Mukto Aahwan


Mukto Ahwan
মুক্ত আহ্বান


ধর্ম পিপাসু প্রতিটি ব্যক্তিকে মুক্ত আহ্বান জানানো যাচ্ছে আসুন আমরাও ঈশ্বর দর্শন করে ধর্মের লাভ উঠাই এবং বিশ্বশান্তির বিরাট মিশনে নিজস্ব যোগদান দিই ।

বিশ্বশান্তি কীরূপে আসবে । ব্রহ্ম জ্ঞান থেকে । ব্রহ্মজ্ঞান কোথায় পাওয়া যাবে ? দিব্য জ্যোতি জাগ্রতি সংস্থানে ।


 দিব্য জ্যোতি জাগ্রতি সংস্থান দ্বারা আয়োজিত বিভিন্ন আধ্যাত্মিক কার্যক্রম প্রতিদিন  ‘আস্থা ভজন’ চ্যানেলে সকাল ৭:২০মি. থেকে ৭:৪০মি. পর্যন্ত, দিশা চ্যানেলে রাত্রি ৯:০০মি. থেকে ৯:২০মি. পর্যন্ত এবং আস্থা চ্যানেলে রাত্রি ১০:৪০মি. থেকে ১১:০০ মি. পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয়। 


সংস্থানের  নিজস্ব মাসিক পত্রিকা “অখণ্ড জ্ঞান” হিন্দি, ইংলিশ ও পাঞ্জাবী ভাষায় প্রকাশ করা হয়। বুকিং এর জন্য সরাসরি যোগাযোগ করুন 011-27050888 এই নম্বরে। www.djjs.org/akhadgyan 


আপনার  Smart Phone এ Download কারুন DJJS App আর 24X7 উপভোগ করুন বিভিন্ন আধ্যাত্মিক প্রবচন ও দিব্যভজন। আর জানুন সংস্থানের দেশ বিদেশের বিভিন্ন শাখার ঠিকানা ও ফোন নম্বর। 


সম্পর্ক সূত্র :- মুখ্যালয় * প্লট নং- 3, পকেট -ও.সি.এফ., পরবনা রোড, পুষ্পাঞ্জলি এনক্লেভের পিছনে, পিতামপুরা এক্স-, দিল্লী - 34, ফোন- 91-11-27020666/27024555, ই-মেল- ho@djjs.org ; akhandgyan@djjs.org  ওয়েবসাইট:-  www.djjs.org ;   www.facebook.com/djjsworld ; আরও জানতে Subscribe করুন ‘DivyaJyoti News’ You Tube  Channel স্বামী প্রভুচৈতণ্যানন্দ - 8013912793 (পশ্চিমবঙ্গ), Whatsapp সহ 08285475666 (দিল্লী); 

ই-মেলঃ prabhu.djjs@gmail.com,  

 












বাইরে আমরা যে কীর্তন শুনি আসলে তা আমাদের ভেতরে অবিরাম যে কীর্তন চলছে তার দিকে ইশারা করে । সেটা আসলে অনাহত নাদ বা ব্রহ্মনাদের ইঙ্গিত মাত্র । 


বিনা বাজাএ নিস দিন বাজে ঘণ্টা শঙ্খ নগারী রে ।

বহরা সুন সুন মস্ত হতে হৈ তন কী খবর বিসারী রে ।।

না বাজিয়েও সেই ঘণ্টা, শঙ্খ, নগারী বাজছে যেটা শুনে বহরা ব্যক্তিও আনন্দিত হয়ে যায় । রাসলীলায় ভগবান শ্রী কৃষ্ণের বাঁশুরি আসলে এই অনাহত নাদের ইঙ্গিত দেয় ।  এই নাদই ছিল যা দ্বাপর যুগে গোপীগণ শুনতেন । যা শুনে তারা আনন্দিত হয়ে উঠতেন । ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাথে মেলার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠতেন এবং দৌড়ে চলে যেতেন । কিন্তু সেই বাঁসুরী শুধু গোপীরাই কেন শুনতে পেতেন, প্রশ্ন ওঠায় স্বাভাবিক অন্যেরা কেন শুনতে পেতেন না ? কারণ গোপীরা সেই তত্ত্বজ্ঞান বা ব্রহ্মজ্ঞান পেয়েছিলেন । অতএব সেই বাঁসুরী গোপীগণ বাহ্যজগতে নয় বরং তা অন্তর্জগতে শুনতেন । ভগবান শ্রী কৃষ্ণ যদি বাইরের জগতের বাঁশুরি বাজাতেন তাহলে তো সবাই সেই আওয়াজ শুনতে পেত এবং সবাই ভগবান শ্রী কৃষ্ণের কাছে দৌরে যেত, কিন্তু সেটা হয় নি শুধু গোপীরাই শুনতেন সেই বাঁশীর আওয়াজ, ব্যাকুল হয়ে উঠতেন এবং দৌড়ে চলে যেতেন । অর্থাৎ এটা পরিস্কার যে সেই বাঁশী আসলে অন্তর্জগতের বাঁশীর বা অনহদ ধ্বনির আওয়াজ ।  সেই বাঁসুরী কেবল দ্বাপরেই নয় বরং আজকেও বাজছে । প্রয়োজন হল এমন সতগুরুর খোঁজ করা যাঁর কৃপার দ্বারা আজও আমরাও সেই বাঁসুরীর ধুন শুনতে পারবো । যা আমাদের অন্তরে নিরন্তর বেজে চলেছে । আর যিনি আমাদের সেই কীর্তন অন্তর্জগতে শুনিয়ে দেবেন তিনিই হলেন পূর্ণ সতগুরূ । 


















‘চার পদার্থ’ 

চার পদার্থের বা বস্তুর বর্ণনা আমরা অনেক জায়গাতেই পাই । কিন্তু সেই চার বস্তু কোনটি সেই সম্পর্কে আমরা অনভিজ্ঞ । ভগবান নারায়নের চার হাতে শঙ্খ, সুদর্শন চক্র, গদা ও পদ্ম ধারণ করে কীসের ইঙ্গিত দিতে চাইছেন ?  শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে,  

সুণি সমুঝহিং জন মুদিত মন মজ্জহিং অতি অনুরাগ ।

লহহিং চারি ফল অছত তনু সাধু সমাজ প্রয়াগ ।।

(রা. চ. মা. – ১/২)

শ্রীগুরু চরণ সরোজ রজ নিজ মন মুকুরূ সুধারি ।

বরনউঁ রঘুবর বিমল জসু জো দায়কু ফল চারি ।

(রা. চ. মা. - অযো)

আমি সেই গুরুর চরণ রজ ধারন করি যিনি আমার মনরূপী দর্পণকে পরিস্কার করে দেন । তখন আমি প্রভুর নির্মল যশ গান করবো, যিনি আমাকে চার ফল প্রদান করবেন । এখন ভেবে দেখা দরকার যে গোস্বামী তুলসীদাস একদিকে বলছেন আমার ধর্ম, অর্থ কাম এবং মোক্ষ চাই না অর্থাৎ তাঁর মতে এগুলি সেই চার ফল নয় যেগুলিকে আজকাল চার ফল বলে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে । অন্যদিকে তিনি অযোধ্যা কাণ্ডে চরণরজ চাইছেন যা কিনা চার ফল প্রদান করে । বালকাণ্ডেও সাধু সমাজের নিকট থেকে চার ফলের প্রাপ্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে । তাহলে সেই চার ফল কোনটি ?

চার বেদের রচনা করা হয় ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ এবং অথর্ববেদ । ‘বেদ’ শব্দ যা কিনা ‘বিদ’ ধাতুর থেকে এসেছে । যার অর্থ হল জানা । সেই জ্ঞান যার দ্বারা আমরা প্রভুকে জেনে নিই । ‘জানা’-কেই বেদ বলা হলে চার বেদ কীসের সঙ্কেত দিচ্ছে ? 

যখন ব্রহ্মার উৎপত্তি হয় তো তিনি বুঝতে পারেন না যে কী করবেন ? যখন জানার চেষ্টা করে ক্লান্ত হয়ে পরেন তখন তিনি প্রার্থনা করতে শুরু করেন যে আপনি কে যার কারণে আমার উৎপত্তি হয়েছে ? শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে তখন সেখানে প্রভু প্রকট হন এবং তিনি ব্রহ্মাকে ‘চতুষ্পদী ভাগবতের’ জ্ঞান প্রদান করেন । এই চতুষ্পদী ভাগবত কাকে বলা হয়েছে ? যেখানে ভাগবত মহাপুরাণ তো ব্যাস জী দ্বাপরান্তে করেন । 


বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থে ভগবান বুদ্ধ যাকে ‘চার আর্য সত্য’ বলেছেন এবং মহাবীর যাকে ‘চার ঘাট’ বলেছেন এসমস্ত কোন চার উপলব্ধি যার চর্চা সন্তগণ মহাপুরুষগন, ঋষি, গুরু এবং অবতারগন নিজেদের বাণীতে উল্লেখ করেছেন । সেগুলিকে জানার প্রয়োজন এবং এই চার ক্রিয়াগুলির প্রকৃত বোধ করবার জন্যই সতগুরুর শরণে যাবার প্রয়োজন । 

গুরবাণীতেও চার পদার্থের চর্চা করা হয়েছে,

চারি পদারথ জে কো মাগৈ । সাধ জনা কী সেবা লাগৈ ।

(গুরবাণী – ৫/২২৬)

শ্রী গুরু অর্জুনদেব বলেছেন, যদি কেউ চার পদার্থ প্রাপ্ত করতে চায় তাহলে সে সাধুর সেবার দ্বারাই তা প্রাপ্ত করতে পারে । 

গলী তো চারোঁ বন্দ হুই, মৈঁ হরি সে মিলু কৈসে যায় ।

মীরা বাই বলেছেন যে চারটি গলিই তো বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে আমি প্রভুর সাথে কীভাবে মিলবো ? সেই মীরা যিনি কৃষ্ণপ্রেমে পাগল ছিলেন । প্রার্থনা করছেন, আমি প্রভুর সাথে কীভাবে মিলবো । মীরাবাই চার গলির উল্লেখ করেছেন, কেবল নামের তফাৎ ।

চারি পদারথ কমল প্রগাস । সভ কৈ মধি সগল তে উদাস ।

বলা হয়েছে যখন চার পদার্থ প্রকটিত হয় তখন মানব সমস্ত লোকজনের মধ্যে থেকেও সবার থেকে উদাসীন অর্থাৎ বিরাগের মধ্যে থাকতে পারে । যেমন কমল নোংরার মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তার গায়ে নোংরা এতটুকুও লাগে না । এখানে শ্রীগুরু অর্জুনদেবও চার পদার্থের প্রাপ্তির কথা বলছেন । চার পদার্থের সম্বন্ধে বলা হয়েছে,

চারি পদারথ লৈ জগি জনমিআ সিব সকতী ঘরি বাসু ধরে । 

(গুরবাণী – ১/১০১৩)

বলা হয়েছে, সংসারে যখন জন্ম হয় তখন চার পদার্থ সাথে নিয়ে এসেছিলে তাহলে এখানে ভেবে দেখা উচিত যে জন্মের সময় আমরা কী ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ সাথে নিয়ে এসেছিলাম । তাহলে এখানে কোন চার পদার্থের ইঙ্গিত রয়েছে যা আমরা জন্মের সময় সাথে নিয়ে এসেছিলাম ? যদি আমরা ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষকেই চার পদার্থ হিসেবে ধরে নিই তাহলে এর অর্থ হল জন্মের সময় আমরা ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষ সাথে নিয়ে এসেছি । কিন্তু তাহলে আবার এর প্রাপ্তির জন্য কেন বলছেন,

সতিগুর কৈ বসি চারি পদারথ । তীনি সমাএ এক ক্রিতারথ ।।

(গুরবাণী – ১/১৩৪৫)

অর্থাৎ চার পদার্থ সতগুরুর বশে রয়েছে । যখন আমরা চার পদার্থ সাথে নিয়ে জন্মেছি তাহলে সেগুলি সতগুরুর কাছে কীকরে রয়েছে ? এটাই জানা দরকার যে বাস্তবে সেই চার পদার্থ কোনটি যাকে মীরা বলেছেন,


রামায়নে গোস্বামী তুলসীদাস বলেছেন যে সাধু সমাজরূপী প্রয়াগে স্নান করলে চার ফলের প্রাপ্তি হয়, যাতে স্নান করে মনের ময়লা ধুয়ে যায় । যে প্রেমপূর্বক সন্তের প্রবচনকে শ্রবণ করে, তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে,

মজ্জন ফল পেখিও ততকালা । কাক হোহিং পিক বকউ মরালা ।

সুনি আচরজ করৈ জনি কোই । সতসঙ্গতি মহিমা নহিঁ গোই ।।

(রা. চ. মা. – ১/৩/১)

সাধু সমাজরূপী তীর্থে স্নান করার ফল শীঘ্রই পাওয়া যায় । কাকের মতো বৃত্তি ব্যক্তিরাও কোকিলের মতো বৃত্তি হয়ে যায় । যাহাদের বাণী আগে  তীক্ষ্ণ গায়েজ্বালা ধরানোর মতো লাগতো তাদের বাণীতে কোকিলের মতো মধুরতা আসে । এবং বক পাখির মতো ছলকপট বৃত্তির লোকেদের স্বভাব হংসের স্বভাবের মতো নির্মল হয় এবং সে সংসারের নাশবান বস্তুসকলের মধ্যে থেকে সার তত্ত্ব গ্রহন করেন । এখন একথা শুনে আশ্চর্য হবার কিছুই নেই, কারণ সৎসঙ্গের মহিমা এরকমই যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না । গোস্বামী তুলসীদাস বলেন যে সৎসঙ্গে গিয়ে চার ফল মেলে । অনেক স্থানে সেই চার ফলের বর্ণনা স্বরূপ ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষ হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে । যেখানে এই চার পুরুষার্থ তো সংসারের সঙ্গে সম্বোধিত । 

অরথ ন ধরম ন কাম রুচি গতি ন চহউঁ নিরবান ।

জনম জনম রতি রাম পদ য়হ বরদানু ন আন ।।

(রা. চ. মা. – ২/২০৪)

আমার না তো ধর্ম, অর্থ, কাম চাই আর না চাই মোক্ষ । আমি তো জন্ম-জন্মান্তরের প্রীতি চাইছি যাতে, হে প্রভু আমি প্রত্যেক জনমে তোমার চরনের সাথে জুড়ে থাকি । অযোধ্যা কাণ্ডে গোস্বামী তুলসীদাস বলেছেন,

চারি পদারথ কহৈ সভু কোই । সিঁম্রিতি সাসত পণ্ডিত মুখি সোই ।

বিনু গুর অরথু বিচারূ ন পাইআ । মুকতি পদারথু ভগতি হরি পাইআ ।।

(গুরবাণী – ১/১৫৪)

চার পদার্থ তো সবাই বলেন, গ্রন্থকে যিনি পড়েন সেই পণ্ডিত জনও বলেন । সমস্ত ধর্মগ্রন্থ ও শাস্ত্র চার পদার্থের মহিমা গায় কিন্তু  গুরু বিনা চার পদার্থের প্রাপ্তি হতে পারে না । এই মুক্তি প্রদানকারী চার পদার্থকে ভক্ত একমাত্র গুরুর কৃপাতেই প্রাপ্ত করতে পারে এজন্য আমাদের প্রয়োজন হল এমন একজন সদগুরুর খোঁজ করা যিনি আমাদের চার পদার্থের বোধ করিয়ে দেবেন । তিনিই হলেন পূর্ণ সতগুরু এতে কোনোরকম সংশয় নেই । 






ঈশ্বর কি দেখা যায় ? এই বিষয়ে আসুন দেখা যাক কোন শাস্ত্র কী বলে ? 


অখণ্ড মণ্ডলাকারং ব্যাপ্তং য়েন চরাচরং ।

তৎপদং দর্শিতং য়েন তস্মই শ্রী গুরুবে নমঃ ।। 

(গুরু প্রনাম মন্ত্র) 

সেই পরমাত্মা যাকে খণ্ডিত করা যায় না । মণ্ডলাকার অর্থাৎ সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডে সমাহিত রয়েছেন । ‘চর’ বা ‘অচর’ অর্থাৎ গাছপালা, পশুপক্ষী, সব কিছুর মধ্যে মিলে মিশে রয়েছেন । সেই পরমাত্মা সৃষ্টির প্রতিটি অণুতে পরমাণুতে বিদ্যমান । বলা হয়েছে ‘তৎপদং দর্শিতং’ আমাদের সেই পরম তত্ত্বের যিনি দর্শন করিয়ে দেন তিনিই হলেন পূর্ণ সদগুরু । তাঁকেই আমার প্রণাম । অর্থাৎ উনিই পূর্ণ-গুরু যিনি আমাদের হৃদয়ের মাঝেই সেই পরমাত্মার তত্ত্বরুপ দর্শন করিয়ে দেন । কিন্তু দর্শন কী প্রকারে হবে, এই দুই নেত্র দ্বারা হতে পারে না ।


তদ্বিদ্ধি প্রনিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া । 

উপদেক্ষ্যন্তি তে জ্ঞানং জ্ঞানিনস্তত্বদর্শিনং । 

(গীতা – ৪/৩৪)

হে অর্জুন যিনি পরমাত্মাকে তত্ত্ব থেকে জানেন এমন কোনও জ্ঞানী পুরুষ অর্থাৎ সদগুরুর শ্মরনে গিয়ে তাঁকে দণ্ডবৎ প্রণাম করে তারপর ছল কপটতা মুক্ত হয়ে পরমাত্মার সম্পর্কে প্রশ্ন করো, তৎপশ্চাৎ তার চরণের সেবা কর এবং সেই জ্ঞানকে তত্ত্ব থেকে জানার চেষ্টা করো । যখন সদগুরু জ্ঞান দীক্ষা দেবেন ঠিক সেই সময় তোমায় প্রভুর তত্ত্ব স্বরূপের দর্শন করাবেন ।

অখণ্ডৈকরসঁ ব্রহ্ম নিত্যমুক্তং নিরাময়ম্ ।

সস্মিন্ সন্দর্শিতং য়েন স ভবেদস্য দেশিকঃ ।।

                                                            (গুরুগীতা) 

অর্থাৎ অখণ্ড, একরস, নিত্যমুক্ত এবং নিরাময় ব্রহ্মকে জিজ্ঞাসুর হৃদয়ে যিনি দেখিয়ে দেন – তিনিই সদগুরু তিনিই পরমগুরু যিনি জীবরূপী ভানুকোটি(হাজার সূর্যের সমান) আলোককে আমাদের হৃদয়ে প্রকট করিয়ে দেন । সরল ভাষায় বলা যায় যিনি ঈশ্বরের তত্ত্বস্বরূপ অর্থাৎ জ্যোতিরূপ আমাদের ভিতরেই দর্শন করিয়ে দেন তাঁকেই পরম গুরু বলা হয় তথা এক জিজ্ঞাসুর উচিৎ তারই শ্মরনাগত হওয়া ।

নাহং বেদৈর্ন তপসা ন দানেন ন চেজ্যয়া ।

শাক্য এবংবিধো দ্রষ্টুং দৃষ্টবানসি মাং যথা  ।। 

                                                                       (গীতা – ১১/৫৩)

হে অর্জুন ! তুমি এখন আমার যে স্বরূপকে দেখলে সেই স্বরূপে আমায় না তো বেদ অধ্যয়নের দ্বারা পাওয়া যায়, আর না তো তপস্যার দ্বারা, না দান দক্ষিণাদির দ্বারা, কিমবা যজ্ঞ ইত্যাদির দ্বারা আমায় এই রূপে দেখা যেতে পারে । 

ন তু মাং শক্যসে দ্রস্টুমনেনৈব  স্বচক্ষুষা ।

দিব্যং দদামি তে চক্ষুঃ পশ্য মে যোগমৈশ্বরম ।। 

    (গীতা – ১১/৮)

হে অর্জুন তোমার এই দুই চোখ মায়ার বস্তুসকলকে দেখার জন্য দেওয়া হয়েছে । এই নেত্রের দ্বারা তুমি আমায় দেখতে পারবে না । তোমার এই চর্মচক্ষু আমাকে দেখতে অসমর্থ । এই দুই চোখ দিয়ে কেবল ভৌতিক জগতকেই দেখা যেতে পারে । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে আগেই বলে দিয়েছিলেন যে তিনি কোথায় থাকেন । 

অহমাত্মা গুড়াকেশ সর্বভুতাশয়স্থিতঃ । 

                                             (গীতা – ১০/২০) 

হে গুড়াকেশ ! আমি হলাম সমস্ত ভুত এবং প্রাণীর হৃদয়ে স্থিত সবার আত্মা । এটাই জানার যোগ্য সত্য হল যে প্রভু দূরে কোথাও নেই । আমাদেরই হৃদয়ে লুকিয়ে রয়েছেন । কিন্তু আজকাল মানুষ সেই পরম সত্ত্বাকে যা কিনা হৃদয়েরই মাঝে পূর্ণ বিশালতাকে নিয়ে বসে রয়েছেন তাঁকেই ভুলে বসে রয়েছেন। 

“দিব্যং দদামি তে চক্ষুঃ” আমি তোমাকে সেই দিব্য নেত্র প্রদান করছি । যার দ্বারা তুমি আমার পরম ঐশ্বর্যময় স্বরূপকে জানতে পারবে । দিব্য শক্তিকে অর্থাৎ সেই শাশ্বত স্বরূপকে দিব্য নেত্র দ্বারা নিজের হৃদয়ের মাঝে দেখতে পারবে । যাকে উপনিষদে বলা হয়েছে,

শৃণবন্তোপি ণ শৃণবন্তি জানন্তোওপি ন জানতে ।

পশ্যন্তোওপি ন পশ্যন্তি পশ্যন্তি জ্ঞান চক্ষুষঃ ।।  

শ্রবণ শক্তি থাকা সত্ত্বেও যাকে শুনতে পাই না, অনেক কিছু জানার পরেও তাকে জানি না, সবকিছু দেখার পরেও যাকে দেখতে পাই না । জ্ঞানী তাঁকে জ্ঞান চক্ষুর দ্বারা অর্থাৎ দিব্য নেত্রের দ্বারা দেখে । 

গুর পরসাদি বুঝিআ জা বেখা হরি ইকু হৈ হরি বিনু অবরূ ন কোই ।

কহে নানকু এহি নেত্র অন্ধ সে সতিগুরি মিলিএ দিব দৃসটি হোই ।।

(গুরবাণী – ৩/৯২২)

যখন গুরুর কৃপা হল তখন জানতে পারলাম যে সেই প্রভু তো একই যিনি প্রতিটি অণু পরমাণুতে সমাহিত রয়েছেন । সেই প্রভু ছাড়া জগতে আর কিছুই নেই । কিন্তু এই চোখ অন্ধ অর্থাৎ এই নেত্রের দ্বারা সত্যকে চেনা অসম্ভব । যখন সতগুরু মেলে তখন তিনি আমাদের দিব্য নেত্র প্রদান করেন । যার দ্বারা আমাদের প্রভুর শাশ্বত স্বরূপের অনুভব হয়, যিনি কিনা আমাদের হৃদয়ের মাঝেই লুকিয়ে রয়েছেন । গুরুর কাজ হল তাঁকে প্রকট করা । যদি গুরু সেই স্বরূপকে আমাদের হৃদয় মাঝে প্রকট না করিয়ে দেন তাহলে তিনি গুরু নন । যেমন ডাক্তার যখন অন্ধ ব্যক্তির চোখের অপারেশন করেন রোগীকে দেখবার জন্য অভ্যাস করতে বলেন না । তার চোখের পট্টি খুলে দিয়ে তিনি অন্ধকে জিজ্ঞাসা করে বলতে বলেন কিছু দেখতে পাচ্ছ কি ? যখন সেই ব্যক্তি বলা শুরু করে আমি এই- এই জিনিস দেখতে পাচ্ছি । তখন ডাক্তার বলেন এবার যাও এখন আপনি দেখতে পারবেন । ঠিক সেই রকম যখন আমাদের পূর্ণ গুরু মেলে তখন তিনিও আমাদেরও এই শরীরের মাঝেই প্রভুর দর্শন করিয়ে দেন । শ্রীগুরু নানক দেব জী বলেন –

ঘর মহি ঘরু দেখাই দেই সো সতিগুরূ পুরখু সুজাণু । 

(গুরবাণী – ১/১২৯১)

পূর্ণ সতগুরু তিনিই যিনি আমাদের এই শরীর-রূপী ঘড়ের মধ্যেই পরমাত্মার ঘড়কে দেখিয়ে দেবেন । ‘সুজান’ অর্থাৎ যার নিজের চক্ষু খুলেছে । যিনি হৃদয়েই প্রভুর দর্শন করিয়ে দেন, তিনিই পূর্ণ সতগুরু । গুরুর কার্য হল সেই সত্যকে প্রকট করিয়ে দেওয়া ।

একবার স্বামী বিবেকানন্দকে কেউ প্রশ্ন করেন, ধর্ম কাকে বলে ? 

What is religion ?

তখন উত্তরে বিবেকানন্দ বলেন – 

Religion is the realization of God. 

পরমাত্মার সাক্ষাৎকার করে নেওয়া বা অনুভব করে নেওয়াই হল ধর্ম । ধর্মের আর কোন পরিভাষা হতে পারে না । বাকী সব তো ধর্মের গুন, যা ধর্ম জাগরণের পরে মানুষের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বিকশিত হতে থাকে । 


ঘর মহি ঘরু দেখাই দেই সো সতিগুরু সো সতিগুরু পুরখু সুজাণু ।

(গুরবাণী – ১/১২৯১)

পূর্ণ সতগুরু হলেন তিনিই যিনি আমাদের এই শরীর-রূপী ঘড়ের মধ্যেই পরমাত্মার ঘড়কে দেখিয়ে দেবেন । ‘সুজান’ অর্থাৎ যার নিজের চক্ষু খুলেছে । যিনি হৃদয়েই প্রভুর দর্শন করিয়ে দেন, তিনিই পূর্ণ সতগুরু । গুরুর কার্য হল সেই সত্যকে আমাদের অন্তর্জগতে প্রকট করিয়ে দেওয়া । 

গু অন্ধেরা জানিয়ে রু প্রকাশ (কবীর)

গুরু = গু(অন্ধকার ) + রু (প্রকাশ বা আলোক বা জ্যোতি )

অর্থাৎ গুরু হলেন তিনি যিনি তৎক্ষণাৎ আমাদের ত্রিনেত্র খুলে দিয়ে অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে সেই ঈশ্বরীয় জ্যোতির দর্শন করাবেন । এখানে সংসারের বা ভৌতিক জগতের আলোর কথা নিশ্চয় বলা হয় নি । কারণ ভৌতিক জগতের আলো তো আমরা সবাই দেখেছি । এবং তা দেখার জন্য কোন প্রকার গুরুর প্রয়োজন হয় না বরং চোখ থাকলে আমরা নিজেরাই তা দেখতে পারি ।  গুরুই একমাত্র দীক্ষার দ্বারা আমাদের সেই ঈশ্বরীয় জ্যোতির দিকে নিয়ে যান । আমরা দুটি শব্দের কথা জানি একটি হল শিক্ষা এবং অপরটি হল দীক্ষা । শিক্ষা হল থিয়োরিটিক্যাল, অপরটি হল প্রাকটিক্যাল । আমরা কানে শুনে যা কিছু শিখি তা হল শিক্ষা । যা কিছু প্রত্যক্ষভাবে দেখি তা হল দীক্ষা । দীক্ষা শব্দটি সংস্কৃত ‘দিক্’ ধাতু থেকে এসেছে যার অর্থ হল দেখানো । প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, কী দেখানো ? গুরু দীক্ষার দ্বারা কী বা দেখাবেন । নিঃসন্দেহে এখানে সেই ঈশ্বরীয় জ্যোতির বা ত্বত্ত রূপের দর্শনের ইঙ্গিত করা হয়েছে ।  দীক্ষা হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা ঈশ্বরের বা পারব্রহ্মের সেই অলৌকিক জ্যোতির দর্শন করানো হয় ।  দীক্ষার সময় উপনয়ন শব্দটির ব্যবহার করা হয় যার দ্বারা উপরের নয়ন অর্থাৎ ত্রি-নয়ন বা ত্রিনেত্র বা দিব্য চক্ষুর ইঙ্গিত করা হয়েছে । যে নয়ন বা চক্ষু খুললে ঈশ্বরের সেই অলৌকিক জ্যোতির তৎক্ষণাৎ দর্শন হয় ।   



আদি শঙ্করাচার্য্য বিবেকচূড়ামণিতে অপরোক্ষ(যা পরোক্ষ নয় অর্থাৎ প্রত্যক্ষ) অনুভুতির কথা উল্লেখ করেছেন । ইনারা সবাই ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ করার জন্যই বারবার আহব্বান জানিয়েছান । কারণ দর্শন ছাড়া মুক্তি অসম্ভব । তিনি বলেছেন ব্রহ্মজ্ঞান বিনা মুক্তি অসম্ভব । ব্রহ্মজ্ঞান কী? ত্রিনেত্র বা দিব্যচক্ষু খুলে তৎক্ষণাৎ ঈশ্বরের  সাক্ষাৎকার করাই হল ব্রহ্মজ্ঞান । 


বদন্তু শাস্ত্রাণি য়জন্তু দেবান্ কুরবন্তু কর্মাণি ভজন্তু দেবতাঃ ।

  আত্মৈক্যবোধেন বিনা বিমুক্তির্ন সিধ্যতে ব্রহ্মসতান্তরেঅপি ।। 

                                                                            (বিবেক চূড়ামণি - ৬)

যতই ধর্মশাস্ত্রকে কণ্ঠস্থ করে পাঠক, পুরোহিত বা পণ্ডিতগণ তার ব্যাখ্যা করুক না কেন, যতই শুভকর্ম করুক না কেন, হতে পারে যজ্ঞ দ্বারা দেবতাগণকেও প্রসন্ন করে নিতে পারে, হতে পারে এভাবে একশো ব্রহ্মার আয়ু কেটে গেলেও যেতে পারে, কিন্তু আত্মতত্ত্বকে জানা ছাড়া মুক্তি হতে পারে না । বলার তাৎপর্য হল যে আজ আমাদের পাঠ-আদি কর্ম-কাণ্ডে না জড়িয়ে গিয়ে সেই সত্যকে জেনে নেওয়া উচিত, যে সত্যের মহিমা সমস্ত সন্ত মহাপুরুষ-গন গেয়েছেন ।

একবার নামদেব প্রভুর বিষয়ে চর্চা করছিলেন । তাঁর কাছে সমস্ত সঙ্গত  প্রভুর মহিমা শোনার আনন্দ নিচ্ছিলেন । সেই সময় এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে নামদেবকে প্রশ্ন করলেন, আপনি যে সত্যের চর্চা করছেন তাঁকে জেনেছেন কী,  না কি কেবল চর্চার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছেন ? 

সেই ব্যক্তির দ্বারা এধরনের প্রশ্ন কেবল নামদেবের প্রতিই হওয়া উচিত তাই নয়, বরং আমাদের সবার সেইসমস্ত ব্যক্তিদের প্রতি হওয়া উচিত যারা পরমাত্মার বিষয়ে কেবল আলোচনার মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেন এবং বিভিন্ন অজুহাতে চতুরতার সঙ্গে ঈশ্বর দর্শনের প্রসঙ্গটিই এড়িয়ে যেতে চান । যারা স্বয়ংই পরমাত্মাকে জানেন না, তারা আমাদের পরমাত্মা সম্বন্ধে কী জানাতে পারবে । এধরনের ব্যক্তিদের কাছে  আমাদের প্রশ্ন করা উচিৎ যারা পাঠের নামে অমূল্য ধর্মগ্রন্থের বাস্তবিকতাকে লুকিয়ে রেখে কেবল ধন সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে লেগে রয়েছেন । ধর্মগ্রন্থগুলি লেখার এটাই কী উদ্দেশ্য ছিল যে আজ আমরা ধর্মগ্রন্থগুলোকে উদরপূর্তির উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করে কেবল রুজি-রুটির সাধন বানিয়ে ফেলি ? এই জন্যই কী সন্ত মহাপুরুষগণ আর গুরুগণ নিজেদের বলিদান দিয়েছিলেন ? আমাদের প্রশ্ন করা উচিৎ সেই সব  ব্যক্তিদের কাছে যারা পাঠের নামে ঐসব ব্যক্তিদের সাথে থাকে আর ধর্মগ্রন্থের বাণীগুলোর ইচ্ছামত ঢঙ্গে ব্যাখ্যা করে অমূল্য বাণীর ব্যবসা করে চলেছেন, কিছু টাকার লোভে ধর্মগ্রন্থের বাণীগুলিকে বিক্রি করে চলেছেন । 

যে ব্যক্তি নামদেবকে এই প্রশ্ন করে ছিলেন তিনি বাস্তবে ঈশ্বরাকাঙ্খী ছিলেন । তাই তো তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি কি সেই প্রভুকে দেখেছেন, যাঁর চর্চা আপনি করছেন ? নামদেব মৃদু হেসে জবাব দেন –

জব দেখা তব গাবা তউ জন ধীরজু পাবা ।

নাদি সমাইলো রে সতিগুরূ ভেটিলে দেবা ।।

                                                           (গুরবাণী - ৬৫৬)

উত্তরে তিনি বলেছেন, আগে সেই প্রভুকে দেখে তবেই গাইছি । অর্থাৎ দেখার পর বা জানার পর যারা পরমাত্মার গুণগান গাইতে থাকেন, তাদের দ্বারাই লোক ধৈর্য্য পূর্বক জ্ঞানচর্চার আনন্দ নিয়ে শান্তি প্রাপ্তি করতে পারবেন । নামদেব আরও বলেছেন যখন আমরা আমাদের ভেতরে অবস্থিত সেই আওয়াজকে জানবো, তার পরেই সন্তের বাণী বোধগম্য হবে । এজন্য তিনি বলেছেন সদগুরুর সঙ্গে ভেট করো অর্থাৎ সদগুরুর প্রাপ্তি করো, যিনি আমাদের জীবনে সেই সত্যকে প্রকট করিয়ে দিতে পারবেন, যাঁর দ্বারা অজ্ঞানতা, অসত্যতা, অন্ধকার ইত্যাদি নিজে থেকেই দূর হয়ে যাবে । 


পরীক্ষ্য লোকান্ কর্মচিতান্ ব্রাহ্মণো নির্বেদমায়ান্নাস্ত্যকৃতঃ কৃতেন ।

তদ্ধিজ্ঞানার্থং স গুরুমেবাভিগচ্ছেৎ সমিত্পাণিঃ শোত্রিয়ং ব্রহ্মনিষ্ঠম্ ।।

                                                                      (মু – ১/২/১২)

মুণ্ডকউপনিষদের কথানুসারে জাগ-যজ্ঞাদি কর্ম তথা অন্যান্য কর্মকাণ্ডও সাধককে ঐ শাশ্বতের প্রাপ্তি করাতে পারে না ।  জীবনে নিজের কল্যাণ যারা চায় তাদের উচিত সমস্ত সকাম কর্মের ফল স্বরূপ ইহজগৎ তথা পরলোকের সমস্ত সুখ ঐশ্বর্যকে ভালভাবে বিচার বিবেচনা করে বিবেকপুর্বক সেগুলির অনিত্যতা এবং সাংসারিক সুখের পেছনে যে দুঃখ লুকিয়ে থাকে সেগুলিকে বুঝে ভোগ থেকে সর্বদা বিরাগ হয়ে যাওয়া । এটা ঠিকভাবে বুঝে নেওয়া উচিত যে নিজের কৃতকর্মের দ্বারা স্বতঃসিদ্ধ নিত্য পরমেশ্বরকে পাওয়া যায় না । এরকম বিচার করে পরম তত্ত্বের প্রতি নিজের প্রবল জিজ্ঞাসা নিয়ে জিজ্ঞাসুর উচিত পরমাত্মার তত্ত্বজ্ঞান প্রাপ্ত করবার জন্য শ্রদ্ধা এবং বিনয়ের সহিত এমন এক সদগুরুর স্মরনে যাওয়া যিনি ব্রহ্মের প্রত্যক্ষ অনুভূতি করেছেন । যিনি ব্রহ্মনিষ্ঠ হয়েছেন অর্থাৎ ব্রহ্মতে স্থিত হয়েছেন ।


দুর্লভো বিষয় ত্যাগো, দুর্লভং তত্ত্বদর্শনম্ ।

দুর্লভা সহজাবস্থা, সদ্গুরোঃ করুণাং বিনা ।। 

                                                           (শ্রুতি)

অর্থাৎ বিষয়গুলি ত্যাগ করা খুব মুশকিল । তত্ত্বদর্শনকে দুর্লভ বলা হয়েছে কিন্তু অলভ্য বা অসম্ভব বলা হয় নি ।  ।ঠিক সেইরূপ পরমাত্মাকে তত্ত্ব থেকে জানা অত্যন্ত মুশকিল । এছাড়া সহজাবস্থার প্রাপ্তি হওয়া অত্যন্ত দুর্লভ । এসমস্ত কিছুর প্রাপ্তি ততক্ষণ পর্যন্ত অসম্ভব যতক্ষণ পর্যন্ত সদগুরুর করুণা প্রাপ্তি না হয় । অতঃ সদগুরুর কৃপা প্রাপ্ত করার জন্য দরকার হল এই সময়ের পূর্ণ সদগুরুর স্মরনে যাওয়ার । গুরুর স্মরনে না যাওয়া পর্যন্ত মানব কেবল অজ্ঞানতার অন্ধকারে পথ বিচ্যুত হতে থাকে । 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন